বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ অপরাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিকঃ
ক্ষুধার জ্বালায় হাঁস মুরগী কুকুর বিড়ালের জন্য ফেলে দেয়া খাবার কুড়িয়ে আবার কখনও ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়া খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ আবার কখনও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে দিনাতিপাত করার কল্পকাহিনী, গল্প বা উপন্যাসে আমরা পড়ে থাকি। কিন্তু এ গল্প এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বামী-সন্তান হারা এক অসহায় মা কাঞ্চল ম-লের গল্প। জীবন সায়াহ্নে এসে কখনও গাছের তলায়, কখনও অফিস আদালতের বারান্দায় আবার কখনও কারও দোকানের সামনে ল্যাম্প পোষ্টের নিচে প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে চলছে তার দিন ও রাত্রিযাপন। এ মধ্য দুপুরে কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বরে এ প্রতিবেদকের চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় কাঞ্চল মন্ডলের সাথে। এক বুক হতাশা আর চোখে মুখে না খাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে তিনি জানান, বাড়ি ছিল মাগুড়া জেলার লাঙ্গলবাধ চাকদাহ গ্রামে। নমশুদ্র পরিবারের এ মেয়ের পরিণত বয়সে বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী কাশিনাথপুর গ্রামের তারাপদ মন্ডলের সাথে। কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে একটি মেয়ে নাম আলো। আলোর পরিণত বয়সের আগেই শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। পাকিস্তানী বর্বরোচিত বাহিনীর ভয়ে জীবন বাঁচাতে আলোকে নিয়ে তারাপদ মন্ডল চলে যায় ভারতে। ভিটে বাড়িতে ফেলে যায় অসহায় কাঞ্চল মন্ডলকে। দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু স্বামী-সন্তান আর ফিরে এলো না। দেখতে দেখতে ৪৬ বছর কেটে গেল কিন্তু কেউ কথা রাখলেন না। ভিটে মাটি ছেড়ে পেটের দায়ে বের হল পথে। কখনও মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, কখনও ভিক্ষুক বেশে দেশে দেশে ঘুরে ফিরে অবশেষে আসল কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বরে। গাছের তলায় কাপড় চোপড়ের পুটলা রেখে নামলেন ¯œাান করতে। অমনি পুটলা পুটলির উপর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন কিছু নরপশু। দীর্ঘদিনের জমানো স্বপ্ন মূহুর্তের মধ্যে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল। সেই থেকে কেউ টাকা দিলে কাঞ্চল মন্ডল আর টাকা নেয় না। বলে খাওয়ার কিছু-মিছু কিনে দিয়ে যান। কত দেখল মনোহর ধাম, মনোরম দৃশ্য তবুও নিশিদিনে ভুলিতে পারে না স্বামী সন্তানের কথা। একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনগ্রন্থ সেদেশের সংবিধান। সংবিধানে কাঞ্চল মন্ডলদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার কথা অসংখ্য জায়গায় বলা হয়েছে, নিরাশ্রয় ব্যক্তির পূনর্বাসনে কত বাহারি আইন তৈরী হয়েছে’ কিন্তু বিরাজ মন্ডলদের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিন্তে কেউ একটি সেকেন্ডও ভেবে দেখেননি। এ লেখা শেষে রবীন্দ্রনাথের দু বিঘা কবিতার কয়েকটি চরণ মনে পড়ে গেল।
এ জগতে হায় সেই বেশী আছে যার ভুড়িভুড়ি
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।